ভয়মুক্ত একটি সহনশীল বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস
- By Jamini Roy --
- 06 December, 2024
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ভয়মুক্ত, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির সাথে পরিপূর্ণ এক নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখার কথা বলেছেন, যেখানে জনগণ পরস্পরের প্রতি ভয় না রেখে শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করবে। গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকায় ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে ধর্মীয় নেতাদের সঙ্গে এক বৈঠকে এসব কথা বলেন তিনি।
ড. ইউনূস বৈঠকে বলেন, ‘‘আমরা সকলেই জানি, আমাদের মধ্যে সম্প্রীতি রয়েছে। তবে এই সম্প্রীতির সঙ্গে এক অতিরিক্ত বিষয় যুক্ত করতে চাই—ভয়। আমাদের সমাজে সম্প্রীতি থাকলেও, সেই সম্প্রীতির মাঝে ভয়ও আছে।’’
প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘‘আমরা ভীত নাগরিক নই। আমাদের এমন পরিবেশ তৈরি করতে হবে, যাতে মানুষের মনে কোনো ধরনের ভয় না থাকে।’’ তিনি যোগ করেন, ‘‘এমন একটি বাংলাদেশ গড়তে হবে, যেখানে একজন নাগরিক অন্য নাগরিককে ভয় পাবে না।’’ তিনি আহ্বান জানান, বাংলাদেশে ক্রোধ ও ভয় থেকে মুক্ত হয়ে একটি সহনশীল সমাজ গড়ে তোলার জন্য সকলের প্রচেষ্টার প্রয়োজন। এমন একটি বাংলাদেশ যেখানে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলেও, তা সমাধান করা সম্ভব হবে এবং কোনো ধরনের অস্থিরতা সৃষ্টি হবে না।
ড. ইউনূস বলেন, ‘‘যদি আমরা এমন একটি দেশ গড়ে তুলতে পারি, তবে তা হবে একটি সফল দেশ। আমরা এটির জন্য অপেক্ষা করছি এবং আল্লাহ আমাদের সেই স্বপ্ন দেখার এবং সেই দিকে অগ্রসর হওয়ার সুযোগ দিয়েছেন।’’ তিনি সকলকে সহযোগিতা কামনা করে বলেন, ‘‘এটি সম্ভব, আমাদের ঐক্যবদ্ধ প্রয়াসে।’’
প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘‘বাংলাদেশের মানুষ শান্তিতে বসবাস করছে; কিন্তু মাঝে মাঝে কিছু ঘটনা জনগণকে ক্ষুব্ধ করে তোলে। আমাদের সবার দায়িত্ব হলো, এই ক্ষোভ প্রশমিত করা, যাতে তা আরও কোনো অস্থিরতার সৃষ্টি না করে।’’
তিনি আরো জানান, ‘‘বাংলাদেশের জনগণ এক রাজনৈতিক শক্তিকে ক্ষমতাচ্যুত করেছে, তবে তারা এখনো নিষ্ক্রিয় নয়। তারা দেশ-বিদেশে উসকানি দিচ্ছে, যা আমাদের উচিত উপেক্ষা করা।’’ তিনি এই উসকানি মোকাবিলার জন্য জনগণকে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান।
বৈঠকে, দেশের বাইরে থেকে আসা উসকানির ব্যাপারেও সতর্কতা অবলম্বন করার কথা বলেন প্রধান উপদেষ্টা। তিনি বলেন, ‘‘উসকানির কারণে বাংলাদেশ বারবার আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে, যা রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে গুরুতর প্রভাব ফেলেছে।’’ তিনি এর প্রতিকার হিসেবে উসকানির মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের ওপর জোর দেন।
বৈঠকে, দেশের সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার ঘটনার তথ্য সংগ্রহে ধর্মীয় নেতাদের সহযোগিতা চান ড. ইউনূস। তিনি বলেন, ‘‘যদি দেশে সংখ্যালঘুদের ওপর কোনো হামলা ঘটে, তবে দ্রুততম সময়ে সঠিক তথ্য সংগ্রহ করা হবে এবং দোষীদের বিচারের আওতায় আনা হবে।’’ তিনি সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং তাদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেন।
প্রধান উপদেষ্টা জানান, ‘‘সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার বিষয়টি আমাকে গভীরভাবে দুঃখিত করেছে। বর্তমানে বিষয়টি আবার উঠে এসেছে, এবং বিদেশি গণমাধ্যম এ নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করছে। তবে, বাস্তবতা ও বিদেশি গণমাধ্যমের তথ্যের মধ্যে কিছুটা পার্থক্য রয়েছে।’’ তিনি বলেন, ‘‘যদি দেশে এমন কোনো হামলার ঘটনা ঘটে, তা হলে আমরা দ্রুত তথ্য সংগ্রহ করে ব্যবস্থা নেব এবং ক্ষতিগ্রস্তদের প্রতিকার নিশ্চিত করব।’’
এতে, তিনি সকলকে সম্মিলিতভাবে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘‘এই ধরনের ঘটনা রোধে একটি শান্তিপূর্ণ পরিবেশ তৈরি করতে হবে, যাতে বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি অব্যাহত থাকে এবং নাগরিকরা নিরাপদে বসবাস করতে পারে।’’